| |
               

মূল পাতা জাতীয় রাখাল রাহার শাস্তির দাবিতে শাপলা চত্বরে তৌহিদী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ; ৬ দফা দাবি


রাখাল রাহার শাস্তির দাবিতে শাপলা চত্বরে তৌহিদী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ; ৬ দফা দাবি


রহমত নিউজ     22 February, 2025     11:50 AM    


এনসিটিবির পাঠ্যবই সংশোধন কমিটির সদস্য রাখাল রাহার আল্লাহর শানে কটূক্তি, কথিত কবি সোহেল হাসান গালিবের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা এবং র‍্যাব সদস্য খুনি ও ধর্ষণকারী অলেপসহ প্রশাসনের সকল জালিম সদস্যদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তৌহিদী ছাত্র-জনতা।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়ে মিছিল সহকারে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মীর ইদরীস নদভী। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুফতী সাইয়্যেদ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী।

মুফতী মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও মাওলানা ইসহাক খানের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, আহমাদ রফিক, ডাক্তার মেহেদী হাসান, তানযীল আরেফিন আদনান, মাওলানা শের মুহাম্মদ আবু সাঈদ, আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান, মাওলানা আলতাফ হুসাইন, প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, ভারতের সেবাদাস হাসিনা সরকারের সময়ে আমরা দেখেছি, শাহবাগীরা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাগাতার কটূক্তি ও ঘৃণা ছড়িয়ে গেছে। তৌহিদী জনতা প্রতিবাদে নামার পর শাপলায় গণহত্যা চালিয়ে তাদের দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতা হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করেছে, সে পালিয়ে গেছে তার প্রভুর দেশে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এখনো মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কটূক্তি চালিয়ে যাচ্ছে, যা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে কখনোই হওয়ার কথা ছিল না।

বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে আমরা দেখছি, রাখাল রাহা নামে একজন সরকারি কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছে। সে বর্তমান সরকারের শিক্ষা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং এনসিটিবির পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য। এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে রাখাল রাহা মহান আল্লাহকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার পরেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দেশের জনগণ ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, ৯২% মুসলমানের দেশে এভাবে ইসলাম নিয়ে কেউ কটূক্তি করবে, আর জনগণ তা চুপচাপ দেখে থাকবে—এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের পর কেউ ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে স্বপদে বহাল থাকবে, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে কেউ পার পাবে না উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে, এই কটূক্তির মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসররা মূলত দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। তারা জানে, ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করলে জনগণ তাদের ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে প্রতিবাদ করবে। আর এই সুযোগে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালাবে। তাই সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, যেন ভবিষ্যতে কেউ দেশ ও ধর্মবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর সাহস না পায়। সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবি, ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করা। এতে ইসলামবিদ্বেষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সহজ হবে। এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

বক্তারা বলেন, একজন মুসলমান নিজের জান, মাল, এমনকি সম্মানের ওপর আঘাতও হয়তো মেনে নিতে পারে, কিন্তু আল্লাহ এবং রাসূল (ﷺ)-এর ওপর এ ধরনের অশ্লীল এবং জঘন্য আক্রমণ তার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না। এই ধরনের অবমাননার ফলে মুসলমানদের হৃদয়ে যে গভীর ক্ষোভ ও ক্ষত তৈরি হয়, তা বস্তুবাদী মাপকাঠিতে বিচার করা সম্ভব না। কিন্তু বারবার এমন গুরুতর অপরাধ সঙ্ঘটিত হবার পরও সরকার উদাসীন। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে রক্ষা করার বদলে সরকার যখন তাদের উদ্বেগ ও বেদনাকে উপেক্ষা করে, তখন তা অপরাধীদের আরও বেপরোয়া করে তোলে। অন্যদিকে জনগণকে করে সংক্ষুব্ধ। একটি জনগোষ্ঠী বারবার আক্রান্ত হচ্ছে, তারা অভিযোগ করছে, তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না—এটি কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়।

বক্তারা দাবি জানান, সরকারের প্রতি আমাদের জোর দাবি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর ধর্ম অবমাননা বিরোধী আইন প্রণয়ন করতে হবে। এটি কেবল ধর্ম এবং ধার্মিকদের জন্য না; বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যও জরুরি।

৬ দফা দাবিসমূহ:

১ | রাখাল রাহাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং এনসিটিবির পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি থেকে বহিষ্কার করতে হবে। মহান আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে কটূক্তির অপরাধে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২ | বাংলাদেশে দৃঢ় ও কার্যকর ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান আইন ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত পর্যালোচনা করে এই আইনের মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননার সকল অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৩ | রাজনৈতিক অসদুদ্দেশ্যে করা মামলায় আটক সকল আলেম ও ইসলামপন্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। বিশেষ করে গুম ও নির্যাতনের পর জোরপূর্বক আদায় করা জবানবন্দীর ভিত্তিতে যাদের সাজা দেওয়া হয়েছে, তাদের শাস্তি অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে, মামলা বাতিল করতে হবে এবং দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪ | র‍্যাব, ডিজিএফআই, সিটিটিসি-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, এবং নির্যাতনের দায় স্বীকার করে সরকারকে আনুষ্ঠানিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। এ সংক্রান্ত সকল নথি জনসমক্ষে আনতে হবে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে ভিকটিমদের পরিবার ও পুরো জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে।

৫ | আলেপউদ্দীন, মহিউদ্দীন ফারুকীসহ গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৬ | রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার সকল বন্দি ও তাদের পরিবারকে সরকারি তহবিল থেকে যথাযথ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বন্দিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।